[ad_1]
ঢাকার ডায়েরী_
ট্রেনে করে ঢাকার বাহির থেকে ঘুরে এলাম। অনেক দিন ট্রেনে চড়ি না। একসময় রেগুলার ট্রেনে যাতায়াত করতাম। ঢাকা-চিটাগাং, ঢাকা-ফেনী। বাসে উঠলেই বমি হতো দেখে ট্রেনে চড়েছি বহুদিন। ইউনিভার্সিটিতে উঠে বাসে চড়ার অভ্যাস হয়েছে। তারপর থেকে ট্রেন বাদ দিয়ে বাসে যাতায়াত। সময় কম লাগে। গতবার এসেও বাসে গেছি। এইবার আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি, বাচ্চাদের ট্রেনে চড়াবো। ওদের জন্য প্রথম ট্রেনে চড়া, আর আমার জন্য অনেক দিন পর।
যাওয়ার সময় মহানগর প্রভাতী। শোভন চেয়ার। ট্রেনে বসেই ঠিক করেছি, হকাররা যা যা খাবার আনবে, সব খাবো। বসেই চিন্তা হচ্ছিলো, ঝালমুড়ি ওয়ালা আসে না কেন! আমার খাবার বহর দেখে বাকীরাও চমকিত। কফি, দুইবার ঝালমুড়ি, আমড়া, চিকেন চিপস, তিলের খাজা, বাদ দেই নি কিছু। বাচ্চারাও ক্যান্ডিম্যানের কাছ থেকে চকলেট কিনে নিয়েছে ইচ্ছামতো। ভীষণ ধূলার জন্য কামরার বেশীরভাগ জানালা বন্ধ। প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকলেও কুমিল্লার পর থেকে পিলপিল করে লোক উঠা শুরু করলো। একগাদা লোক মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে, তারমধ্যে আমরা বসে, দেখতেও খারাপ লাগে। নভেম্বরের শেষের ভীষণ গরমে অবস্থা কাহিল। একটা টিকেট বেশি করাতে সিট খালি, সেটার চারপাশেও ভীড়। শেষে সেও খালি থাকলো না।
ট্রেনের ছুটে চলার আওয়াজ, দুলকি তাল আগের মতোই আছে। এই যে শব্দ, দুলুনি, এর সাথে ছেলেবেলা জড়িয়ে আছে। শব্দটা কেমন জানি "ছোট ছেলে-বড় ছেলে...ছোট ছেলে-বড় ছেলে..." এরকম বলেই যাচ্ছে! লম্বা জার্নিতে আগে থ্যাবড়া মেরে পাশের জনের কাঁধে মাথা দিয়ে রাখতাম। এখন বাচ্চারা রাখে। ট্রেনটা বরাবরের মতোই মাঠ, নদী সব ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো, আর সাথে বাচ্চাদের চিরন্তণ জিজ্ঞাসা "আর কত সময় বাকী?"।
ফিরার সময় ফিরেছি বন্ধ রিজার্ভ কামরায়। এবার মহানগর গোধূলি। হকারদের উঠার সুযোগ নেই। অন্য লোকজনের চেহারাও দেখতে হয় নি। কিন্তু বাচ্চারা জিজ্ঞাস করছিলো, অন্য দোকানগুলা (হকাররা) কি আসবে না? স্পেশালি ক্যান্ডিম্যান? ক্যান্ডিম্যানের টিকিও দেখা যায় নি। কমলাপুরে নেমে বহু সাধ্য সাধনা করে ঘুমন্ত বাচ্চাদের জাগিয়ে ফিরেছি।
এই দুই রকম অভিজ্ঞতারই দরকার ছিলো বাচ্চাদের। সবসময় সব অবস্থায় তো আর প্রিভিলিজড থাকবে না। জীবনকে কাছ থেকে দেখার দরকার আছে। নানান মানুষ নানান ভাবে জীবন কাটায়। এখানে শ্রেণিভেদ স্পষ্ট। জীবিকা অর্জনের ধরনেও ভিন্নতা। আমাদের আশপাশ, লোকজন, সবকিছু মিলিয়েই আমরা।
বাচ্চা দের জন্য ভালো এডভেন্চার।