বাসার কাছে লাইব্রেরী। হাঁটার দূরত্ব। বাচ্চাদের মাঝেমাঝে লাইব্রেরীতে নিয়ে যাই। নীচে বাচ্চাদের সেকশন, উপরে বড়দের। বড়দের সেকশনে একবার মাত্র গেছি। মূলত নীচেই বিচরণ আমাদের। এত রকম, এত ধরনের বই যে বাচ্চাদের আছে, আমার নিজেরই মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড় হয়। একদম ছোট্ট বাচ্চাদের লেখা ছাড়া খালি ছবিওয়ালা বই থেকে শুরু করে নতুন রিডার, কমিকস, ফিকশন-নন ফিকশন বই, নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বই, বাচ্চাদের ম্যাগাজিন, কি নাই! একপাশে ডেস্কটপে গেইমের ব্যবস্থা, ডিভিডি বাসায় নিয়ে আসা যায়। পাশে একটা রুমে বাচ্চাদের বয়সভিত্তিক নানান এক্টিভিটি বেইসড প্রোগ্রাম হয়। ০-১৮ মাস, প্রি-স্কুল, টিনেজ প্রোগ্রাম।
এই লাইব্রেরীতে গেলে আমার নিজের শৈশবের কথা মনে হয়। পাগলের মতো বই পড়তাম। পেতাম তো না খুব একটা। কমিকস একটা কিনলে দশটা ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়তাম। বইয়ের কালেকশন আছে এমনদের সাথে ফ্রেন্ডশীপ হতো। এখনকার লাইব্রেরীর মতো এত বই চোখেই দেখি নি! বাচ্চাদের নিয়ে লাইব্রেরী যাই হেঁটে হেঁটে। ফিরার সময় স্ট্রলারের নীচ ভর্তি বই প্লাস হাতে একটা করে বই। কেউ কেউ হাঁটতে হাঁটতে বইয়ের পাতা উল্টায়। আমরা কেন স্ক্রিন টাইম দিয়ে বাচ্চাদের এই ফিতরাত নষ্ট করে ফেলি!
অনেক মায়েরা অনলাইনে তাদের ছোট বাচ্চাদের জন্য কি বই কিনবেন লিখে সাজেশন চান। কারোর হয়ত বাচ্চা অনেক ছোট, কয়েক মাসের। ট্রলের উপর ট্রল হয় এ ধরনের জিজ্ঞাসা নিয়ে। বাচ্চাকে পি এইচ ডি করাবেন? এরাই কিন্তু এই গুঁড়ি গুঁড়ি বাচ্চাগুলার হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেয়, টিভির সামনে বসিয়ে রাখে। একটা পাঁচ ছয় মাস কি এক বছরের বাচ্চার হাতে বই দেন, সে উল্টে পাল্টে ছবি দেখুক, কি একটু ছিঁড়ুক। না হলে খেলনা দেন। চামচ-বাটি দেন খেলতে। তা না করে তাকে ধরিয়ে দিলেন স্ক্রিন। এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটা যদি কারো কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
তবে আমরা নিজেরা বই না পড়লে বাচ্চাদেরকে পড়াতে পারবো, এটা অমূলক। বাচ্চা তাই শিখবে, যা আমাদের করতে দেখবে। মাঝখানে খুব ই-বুক পড়ার অভ্যাস হয়েছিলো। এখন আবার চেষ্টা করছি, কাগুজে বই এ ফেরতে যেতে। বাচ্চাদের জন্য লাইব্রেরী থেকে আনা বই আমি পড়ি। আমার পড়া ছাড়া বই ফেরত দেই না। বইয়ের পাতায় আঁকা ছবি, ছোট ছোট গল্পের টুইস্ট এত ভালো লাগে! আমার শুধু ছোট আমি'র কথা মনে পড়ে। এরকম লাইব্রেরীতে বসিয়ে দিতে পারলে সে কি খুশিটাই না হতো!
আপু পাবলিক লাইব্রেরীতে যেতে কি কোন নিয়ম আছে? আমিও ভাবছি তাইলে আমার পুচকুটাকে নিয়ে লাইব্রেরীতে যাব। ওর বয়স ৩মাস। সামনে শীতে তো কিছুই করতে পারব না। ওকে ওখানে নিয়ে কিছু করতে দিলাম